Skip to main content

প্রকৃতির নিয়ম এতই নিষ্ঠুর ??

যদি কোনও মানুষ প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গ করে তবে তার  জন্য তাকে সেই পাপের ভাগী হতেই হয়। পরিণামে তাকে সেই জন্য দণ্ডভােগ করতে হয়।

মানব-জীবনের বিধি-নিয়ম পশুদের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য নয়। একটি বাঘ চাল, গম খায় না অথবা গরুর দুধ পান করে না, কারণ তার আহার হচ্ছে পশুর মাংস। বহু পশু-পক্ষী রয়েছে যারা হয় মাংসাশী, নয় নিরামিষাশী, কিন্তু তারা কেউই ভগবানের ইচ্ছার অধীন প্রকৃতির নিয়ম লঙ্ঘন করে না।পশু, পক্ষী, সরীসৃপ এবং অন্যান্য সমস্ত নিম্ন স্তরের প্রাণীরা অবিচলিতভাবে প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলে; তাই তাদের ক্ষেত্রে কোন রকম পাপের প্রশ্ন ওঠে না, আবার বৈদিক নির্দেশগুলিও তাদের জন্য নয়। কেবল মনুষ্য-জীবনই হচ্ছে দায়িত্ব-সম্পন্ন জীবন।

কেবল নিরামিষাশী হলেই যে প্রকৃতির নিয়মগুলির লঙঘন পরিহার করা হয়, তা মনে করা ভুল। গাছেরও প্রাণ রয়েছে। প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে, একটি জীব আর একটি জীবের আহার। সুতরাং নিষ্ঠাবান নিরামিষাশী হওয়ার জন্য গর্ব করা উচিত নয়; আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানকে জানা। ভগবানকে জানার মতাে উন্নত বুদ্ধিমত্তা পশুদের নেই, কিন্তু বৈদিক শাস্ত্রের শিক্ষা গ্রহণ করার মাধ্যমে এবং প্রকৃতির নিয়ম কিভাবে কার্য করে তা জেনে, এই জ্ঞানের যথার্থ সদ্ব্যবহার করার উপযুক্ত বুদ্ধি মানুষের রয়েছে।
 মানুষ যদি বৈদিক শাস্ত্রের নির্দেশ অবহেলা করে, তা হলে তার জীবন অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়ে। তাই মানুষের কর্তব্য হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানের প্রভুত্ব হৃদয়ঙ্গম করা।
তার কর্তব্য হচ্ছে ভগবানের ভক্ত হওয়া, সব কিছু ভগবানের সেবায় উৎসর্গ করা এবং ভগবানকে নিবেদিত প্রসাদই কেবল
গ্রহণ করা। তার ফলে তিনি তার কর্তব্য যথাযথভাবে সম্পাদন করতে পারেন।

 ভগবদ্গীতায় ভগবান সরাসরিভাবে বলেছেন যে, তিনি কেবল শুদ্ধ-ভক্তের প্রদত্ত নিরামিষ আহারই গ্রহণ করেন (ভগবদগীতা৯/২৬)। তাই মানুষকে কেবল নিষ্ঠাবান নিরামিষাশী হলেই চলবে তাকে ভগবানের ভক্ত হতে হবে এবং তার সমস্ত আহার্য ভগবানকে নিবেদন করতে হবে। তারপর কেবল ভগবানের প্রসাদরূপে অথবা ভগবানের করুণারূপে তা গ্রহণ করতে হবে। যে ভক্ত এভাবেই
সচেতন হয়ে আচরণ করেন, তিনিই যথাযথভাবে মানব-জীবনের কর্তব্য সম্পাদন করছে। যে সমস্ত মানুষ ভগবানকে নিবেদন না করে আহার করে, তারা প্রকৃতপক্ষে তাদের পাপ ভক্ষণ করছে এবং পরিণামে এই পাপের ফলস্বরূপ তাদের নানারকম দুঃখকষ্ট ভােগ করতে হবে,(ভগবদ্গীতা ৩/১৩)।

সমস্ত পাপের মূল উৎস হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানের প্রভুত্ব অস্বীকার করে প্রকৃতির নিয়মের অবাধ্যতা করা।প্রকৃতির নিয়মের অবাধ্যতা অথবা ভগবানের আদেশ অমান্য করার ফলে মানুষের সর্বনাশ হয়।

কেউ যদি যথার্থভাবে প্রকৃতিস্থ হন, প্রকৃতির নিয়ম সম্বন্ধে অবগত হন এবং অনর্থক আসক্তি অথবা বিরক্তির দ্বারা প্রভাবিত না হন, তা
হলে ভগবান অবশ্যই তাকে কৃপা করেন, এবং তিনি তখন নিঃসন্দেহে তাঁর নিত্য আলয় ভগবানের কাছে ফিরে যাওয়ার যােগ্যতা অর্জন করেন!!

গ্রন্থসুত্র-শ্রীঈশোপনিষদ!!
জয় শ্রীলপ্রভুপাদের জয়!!

Comments

Popular posts from this blog

দেবী সুরেশ্বরী ভগবতী গঙ্গে,ত্রিভুবনতারিণি তরল তরঙ্গে

 || দেবী সুরেশ্বরী ভগবতী গঙ্গে,ত্রিভুবনতারিণি তরল তরঙ্গে || 💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦 আজ দশহরা গঙ্গা পূজা। গঙ্গা কলিযুগে পরম তীর্থ । বিশেষ করে সব শাস্ত্রই এই কথা বলে। মহাভারতে ঋষি পুলস্ত্য, ভীস্মের নিকট কীর্তন করেছেন- “যেখানে গঙ্গা আছেন সেটাই দেশ, গঙ্গা তীরের সেই দেশই তপোবন ও সিদ্ধ তীর্থ।” আর্য্য দিগের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থেও ‘গঙ্গা’ নাম উল্লেখ আছে । গঙ্গা বৈদিকী নদী । ঋক্ বেদের একটি শ্লোকে যমুনা, সরস্বতী, শতুদ্রী , পরুষ্ণী , অসিক্লী , মরুৎবৃধা , বিতস্তা , সুষোমা ও আর্জীকিয়া নদীর সাথে গঙ্গার নাম পাওয়া যায় ( ঋক্- ১০/৭৫/০৫) পুরাণ মতে স্বর্গ বাসিনী এই গঙ্গা দেবীকে মর্তে এনেছিলেন সগর রাজার বংশজ রাজা ভগীরথ । তিনি আবার ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের কূলের পূর্বপুরুষ । পৌরাণিক আখ্যান মতে সগর রাজার ষাটি হাজার পুত্র কপিল শাপে ভস্ম হলে, তাহাদিগের প্রেতাত্মার মুক্তির জন্য স্বর্গ থেকে গঙ্গা কে আনবার প্রয়োজন হয় । তপস্যা করতে করতে একে একে রাজা সগর, অসমঞ্জ, অংশুমান, দিলীপ রাজা দেহ ত্যাগ করেন। অবশেষে দিলীপ পুত্র ভগীরথ সফল হন। গঙ্গাকে মর্তে আনতে পারেন । ভোগোলিক তথ্যে গঙ্গার উৎপত্তি গোমুখী শৃঙ্গ ...

পান্ডবা নির্জলা একাদশী মাহাত্ম্য:

জ্যৈষ্ঠ শুক্লপক্ষের এই নির্জলা একাদশী ব্রত সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে শ্রীভীমসেন-ব্যাস সংবাদে বর্ণিত হয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন- হে জনার্দন! আমি অপরা একাদশীর সমস্ত মাহাত্ম্য শ্রবণ করলাম এখন জ্যৈষ্ঠ শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম ও মাহাত্ম্য কৃপাপূর্বক আমার কাছে বর্ণনা করুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, এই একাদশীর কথা মহর্ষি ব্যাসদেব বর্ণনা করবেন। কেননা তিনি সর্বশাস্ত্রের অর্থ ও তত্ত্ব পূর্ণরূপে জানেন। রাজা যুধিষ্ঠির ব্যাসদেবকে বললেন- হে মহর্ষি দ্বৈপায়ন! আমি মানুষের লৌকিক ধর্ম এবং জ্ঞানকান্ডের বিষয়ে অনেক শ্রবণ করেছি। আপনি যথাযথভাবে ভক্তি বিষয়িনী কিছু ধর্মকথা এখন আমায় বর্ণনা করুন। শ্রীব্যাসদেব বললেন-হে মহারাজ! তুমি যেসব ধর্মকথা শুনেছ এই কলিযুগের মানুষের পক্ষে সে সমস্ত পালন করা অত্যন্ত কঠিন। যা সুখে, সামান্য খরচে, অল্প কষ্টে সম্পাদন করা যায় অথচ মহাফল প্রদান করে এবং সমস্ত শাস্ত্রের সারস্বরূপ সেই ধর্মই কলিযুগে মানুষের পক্ষে করা শ্রেয়। সেই ধর্মকথাই এখন আপনার কাছে বলছি। উভয় পক্ষের একাদশী দিনে ভোজন না করে উপবাস ব্রত করবে।দ্বাদশী দিনে স্নান করে শুচিশুদ্ধ হয়ে নিত্যকৃত্য সমাপনের পর শ্রীকৃষ্ণের ...

আমরা আমাদের আসল পরিচয় জানি কি ?

এ ই জগতের প্রায় সবার জীবন দেহকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে । সবাই মনে করে আমি আমার দেহ । তাই সবার পরিচয়ও হয় দেহকেন্দ্রিক - ‘ আমি মানুষ , আমি পুরুষ , আমি নারী , আমি ছাত্র , আমি ডাক্তার , আমি ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি । কিন্তু আসলেই কি দেহই আমি বা আমরা ? কেউ মারা গেলে কেন আমরা বলি - “ অমুক চলে গেলেন । ” যদিও অমুকের দেহটি এখনাে বর্তমান ? নিশ্চয়ই দেহ থেকে এমন কেউ চলে গেছেন , যার অভাবে দেহ এখন নির্জীব , মৃত ; আবার যখন তিনি ছিলেন , তখন দেহ সচল , সজীব ও চেতন ছিল ।  - আমিই দেহ , নাকি আমার দেহ ?  স্বজ্ঞাগত এ বােধটি আমাদের প্রত্যেকেরই আছে যে , প্রকৃত ব্যক্তিসত্তা ‘ আমি আমার দেহ , মন ও বুদ্ধি থেকে পৃথক । তাই আমরা বলে থাকি । আমার হাত , আমার পা , আমার মাথা , আমার দেহ ' ইত্যাদি । ঠিক যেমন আমরা বলি - আমার জামা , আমার জুতাে ; কিন্তু কেউ কি কখনাে বলে - আমি জামা , আমি জুতাে ’ ? এ হাত , পা আদি অঙ্গ - প্রত্যঙ্গগুলাে তাে বটেই এমনকি পুরাে দেহটিও ব্যক্তিসত্তা ছাড়া কিছু করতে পারে না । এক এক করে এ অঙ্গ - প্রত্যঙ্গগুলাে বিচ্ছিন্ন বা প্রতিস্থাপন করলেও ব্যক্তি ‘ আমি ’ র অস্তিত্ব থাকে । কিন্ত...