Skip to main content

শ্রী জগন্নাথ লীলামৃত/রথের রশি স্পর্শে কি ফল হয়?

থের রশির নাম বাসুকি!

জগন্নাথদেবের রথের রশি একটি বার স্পর্শ করার জন্য আকুল হয়ে পড়েন ভক্তরা।
পুরী, কলকাতার রথ কিংবা বিশ্বব্যাপী ইসকনের রথ ---সর্বত্রই রথের রশি ছুঁয়ে দেখার জন্য মানুষের ভীড় উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়।
আসলে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, জগন্নাথদেবের রথের রশি স্পর্শ করলে পুনর্জন্মের কষ্ট সহ্য করতে হয় না।
.
এক সময় পুুরীর রথযাত্রায় জগন্নাথদেবের রশি ছুঁয়ে সেই রথের চাকার তলায় আত্মঘাতী হত
কোনো কোনও ভক্ত।
কেন এই অদ্ভুত মৃৃত্যুবরণ? মানুষের বিশ্বাস শ্রীপুরুষোত্তমের চাকার নীচে প্রাণ বিসর্জন দিতে পারলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বর্গারোহণ নিশ্চিত করা যায়।
.
শ্রীচৈতন্যদেবের অন্যতম প্রিয় শিষ্য সনাতন গোস্বামী অসুস্থতার কারণে একবার রথযাত্রার দিন জগন্নাথদেবের চলন্ত চাকার তলে প্রাণ বিসর্জন দিতে চেয়েছিলেন।
তখন মহাপ্রভুই তাঁকে বলেন, সনাতন, এরকম দেহ ত্যাগে যদি কৃৃষ্ণকে পাওয়া যেত তাহলে এক মূহুর্তের মধ্যে আমিও আমার লক্ষ জন্ম তাঁর শ্রীচরণে সমর্পন করতাম।
কিন্তু দেহত্যাগে কৃৃষ্ণকে পাওয়া যায় না।
এরকম দেহত্যাগ হচ্ছে তমোগুণ।
তমোগুণে কৃৃষ্ণকে পাওয়া যাবে না।
ভক্তি ছাড়া, ভজন ছাড়া তাঁকে পাওয়ার উপায় নেই।
.
ইন্দ্রনীলময় পুুরাণের মতে, জগন্নাথের রথের রশি সামান্য স্পর্শ করলেও পুনর্জন্ম হয় না।
'পুনর্জন্ম ন ভূঞতে।' শ্রীজগন্নাথের বামন অবতার রথে। সেই রথ দর্শন করার পর একটু টানতে পারলেই পুনর্জন্ম হয় না সূতসংহিতায় রয়েছে -- ' রথে তু বামনাং দৃৃষ্টা, পুনর্জন্ম ন বিদতে। অতএব ধার্মিক সনাতনী  বিশ্বাস করেন যে, রথের রশি ছোঁয়ার থেকে বড় পূর্ণ আর কিছুতে হয় না।'
.
 রথযাত্রা নিয়ে কপিল সংহিতায় আছে--  গুন্ডিচাখ্যং মহাযাত্রা যে পশ্যন্তি মুদনিতাঃ সর্বপাপ বিনির্মুক্তা তে যান্তি ভুবন মম।' অর্থাৎ জগন্নাথদেব বলছেন, গুন্ডিচা মহাযাত্রায় যে ব্যক্তি আমাকে দর্শন করবে সে কালক্রমে সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে আমার ভুুবনে যাবে।
.
রথের রশি ছুঁয়ে রথ টানা শুধু নয়, বেশীর ভাগ মানূষ রথের রশি যতটুকু পারে ছিঁড়েও নেয়।
টুকরো টুকরো রথের রশির সুতো মাদুলি করে ছোট ছেলে-মেয়েদের হাতে ও গলায় পরিয়ে দেয়।
বড়রাও পরেন। মানুষের বিশ্বাস এই মাদুলি সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবে।
অসুখ- বিসুখ হলেও তাড়তাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠবে, অনেকেই রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে। ঘুমের ঘোরে চেঁচিয়ে ওঠে।
এরকম কারও মাথায় রশির টুকরো অংশ ছুঁইয়ে দিলে কিংবা তার বালিশের নীচে রেখে ঘুমোলে দুঃস্বপ্ন আসে না।
.
স্কন্দপুরাণ,  বামদেব সংহিতার প্রসঙ্গ টেনে বলা যায় যে, জগন্নাথদেবের রথের রড়ি ধরে টানতে পারলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়।
রথ বা উল্টোরথে দেখা যায় ছোট-ছেলেমেয়েরা খেলনা রথ টানে,পথচলতি বয়স্ক লোকেরাও সেই রথের রশি একবার স্পর্শ করে।
আসলে মানুষের বিশ্বাসটাই বড় কথা।

Comments

Popular posts from this blog

দেবী সুরেশ্বরী ভগবতী গঙ্গে,ত্রিভুবনতারিণি তরল তরঙ্গে

 || দেবী সুরেশ্বরী ভগবতী গঙ্গে,ত্রিভুবনতারিণি তরল তরঙ্গে || 💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦💦 আজ দশহরা গঙ্গা পূজা। গঙ্গা কলিযুগে পরম তীর্থ । বিশেষ করে সব শাস্ত্রই এই কথা বলে। মহাভারতে ঋষি পুলস্ত্য, ভীস্মের নিকট কীর্তন করেছেন- “যেখানে গঙ্গা আছেন সেটাই দেশ, গঙ্গা তীরের সেই দেশই তপোবন ও সিদ্ধ তীর্থ।” আর্য্য দিগের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থেও ‘গঙ্গা’ নাম উল্লেখ আছে । গঙ্গা বৈদিকী নদী । ঋক্ বেদের একটি শ্লোকে যমুনা, সরস্বতী, শতুদ্রী , পরুষ্ণী , অসিক্লী , মরুৎবৃধা , বিতস্তা , সুষোমা ও আর্জীকিয়া নদীর সাথে গঙ্গার নাম পাওয়া যায় ( ঋক্- ১০/৭৫/০৫) পুরাণ মতে স্বর্গ বাসিনী এই গঙ্গা দেবীকে মর্তে এনেছিলেন সগর রাজার বংশজ রাজা ভগীরথ । তিনি আবার ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের কূলের পূর্বপুরুষ । পৌরাণিক আখ্যান মতে সগর রাজার ষাটি হাজার পুত্র কপিল শাপে ভস্ম হলে, তাহাদিগের প্রেতাত্মার মুক্তির জন্য স্বর্গ থেকে গঙ্গা কে আনবার প্রয়োজন হয় । তপস্যা করতে করতে একে একে রাজা সগর, অসমঞ্জ, অংশুমান, দিলীপ রাজা দেহ ত্যাগ করেন। অবশেষে দিলীপ পুত্র ভগীরথ সফল হন। গঙ্গাকে মর্তে আনতে পারেন । ভোগোলিক তথ্যে গঙ্গার উৎপত্তি গোমুখী শৃঙ্গ ...

পান্ডবা নির্জলা একাদশী মাহাত্ম্য:

জ্যৈষ্ঠ শুক্লপক্ষের এই নির্জলা একাদশী ব্রত সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে শ্রীভীমসেন-ব্যাস সংবাদে বর্ণিত হয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন- হে জনার্দন! আমি অপরা একাদশীর সমস্ত মাহাত্ম্য শ্রবণ করলাম এখন জ্যৈষ্ঠ শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম ও মাহাত্ম্য কৃপাপূর্বক আমার কাছে বর্ণনা করুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, এই একাদশীর কথা মহর্ষি ব্যাসদেব বর্ণনা করবেন। কেননা তিনি সর্বশাস্ত্রের অর্থ ও তত্ত্ব পূর্ণরূপে জানেন। রাজা যুধিষ্ঠির ব্যাসদেবকে বললেন- হে মহর্ষি দ্বৈপায়ন! আমি মানুষের লৌকিক ধর্ম এবং জ্ঞানকান্ডের বিষয়ে অনেক শ্রবণ করেছি। আপনি যথাযথভাবে ভক্তি বিষয়িনী কিছু ধর্মকথা এখন আমায় বর্ণনা করুন। শ্রীব্যাসদেব বললেন-হে মহারাজ! তুমি যেসব ধর্মকথা শুনেছ এই কলিযুগের মানুষের পক্ষে সে সমস্ত পালন করা অত্যন্ত কঠিন। যা সুখে, সামান্য খরচে, অল্প কষ্টে সম্পাদন করা যায় অথচ মহাফল প্রদান করে এবং সমস্ত শাস্ত্রের সারস্বরূপ সেই ধর্মই কলিযুগে মানুষের পক্ষে করা শ্রেয়। সেই ধর্মকথাই এখন আপনার কাছে বলছি। উভয় পক্ষের একাদশী দিনে ভোজন না করে উপবাস ব্রত করবে।দ্বাদশী দিনে স্নান করে শুচিশুদ্ধ হয়ে নিত্যকৃত্য সমাপনের পর শ্রীকৃষ্ণের ...

আমরা আমাদের আসল পরিচয় জানি কি ?

এ ই জগতের প্রায় সবার জীবন দেহকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে । সবাই মনে করে আমি আমার দেহ । তাই সবার পরিচয়ও হয় দেহকেন্দ্রিক - ‘ আমি মানুষ , আমি পুরুষ , আমি নারী , আমি ছাত্র , আমি ডাক্তার , আমি ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি । কিন্তু আসলেই কি দেহই আমি বা আমরা ? কেউ মারা গেলে কেন আমরা বলি - “ অমুক চলে গেলেন । ” যদিও অমুকের দেহটি এখনাে বর্তমান ? নিশ্চয়ই দেহ থেকে এমন কেউ চলে গেছেন , যার অভাবে দেহ এখন নির্জীব , মৃত ; আবার যখন তিনি ছিলেন , তখন দেহ সচল , সজীব ও চেতন ছিল ।  - আমিই দেহ , নাকি আমার দেহ ?  স্বজ্ঞাগত এ বােধটি আমাদের প্রত্যেকেরই আছে যে , প্রকৃত ব্যক্তিসত্তা ‘ আমি আমার দেহ , মন ও বুদ্ধি থেকে পৃথক । তাই আমরা বলে থাকি । আমার হাত , আমার পা , আমার মাথা , আমার দেহ ' ইত্যাদি । ঠিক যেমন আমরা বলি - আমার জামা , আমার জুতাে ; কিন্তু কেউ কি কখনাে বলে - আমি জামা , আমি জুতাে ’ ? এ হাত , পা আদি অঙ্গ - প্রত্যঙ্গগুলাে তাে বটেই এমনকি পুরাে দেহটিও ব্যক্তিসত্তা ছাড়া কিছু করতে পারে না । এক এক করে এ অঙ্গ - প্রত্যঙ্গগুলাে বিচ্ছিন্ন বা প্রতিস্থাপন করলেও ব্যক্তি ‘ আমি ’ র অস্তিত্ব থাকে । কিন্ত...